বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার মানে টেকসই ভবিষ্যৎ

আপনি জানেন কি, হারানো বাস্তুসংস্থান ভূমির ১৫ শতাংশ পুনরুদ্ধার করতে পারলে ৬০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তি ঠেকানো সম্ভব?

এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার’। বাস্তুসংস্থান হচ্ছে উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অন্যান্য জৈব ও অজৈব পদার্থ সমন্বিত প্রাকৃতিক একক যেখানে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় একটি জীবনধারা গড়ে ওঠে।

মানুষ এই বাস্তুসংস্থানের অংশ হয়েও শত শত বছর ধরে তা ধ্বংস করতেই মেতে আছে। অতিরিক্ত কৃষিজমির সম্প্রসারণ, নগরায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের ফলে প্রকৃতি আজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটি হেক্টর বন উজার হয়, আয়তনে যা দক্ষিণ কোরিয়ার সমান।

বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বের ৩২০ কোটি অর্থাৎ ৪০ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ১০ লাখ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে বৈশ্বিক জিডিপি। ২০৪০ সাল নাগাদ কৃষি উৎপাদন ১২ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং খ্যাদ্যের দাম বেড়ে যাবে ৩০ শতাংশ।

বৈশ্বিক জিডিপির অর্ধেক প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগে করলে ৩০ ডলার সমান সুবিধা পাওয়া যায়।

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড়ো সমস্যাগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম। বলা হয়ে থাকে জলবায়ু পরিবর্তন এখন পৃথিবীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্যারিস চুক্তির আলোকে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আটকে রাখার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে যতটুকু প্রশমন ব্যবস্থা দরকার তার এক-তৃতীয়াংশ সম্ভব বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার ও অন্যান্য প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে।

বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার বলতে বোঝায় বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা বাস্তুসংস্থান ফিরিয়ে আনা এবং বিদ্যমান বাস্তুসংস্থানকে সুরক্ষা দেওয়া। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, বন ও জলাভূমি রক্ষা, বৃক্ষরোপণ, নগর সবুজায়ন, নদী ও সমুদ্র দূষণ থামানো ও পরিষ্কার করা, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণে পরিমিতি বোধ জাগ্রত করা ইত্যাদির মাধ্যমে বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

 

G M Mostafizul Alam

 

সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যসহ স্বাস্থ্যকর বাস্তুসংস্থান উর্বর জমি, খাদ্য ও পানি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক।

বিশ্বের এক নম্বর উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল। ৫০ বছরের পথচলায় ব্র্যাক পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান রক্ষায় নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে। পরিবেশ দূষণ রোধে কর্মীদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা সবসময়ই ছিল এবং এখন তা আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগে আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি ও পরিবেশগতভাবে টেকসই উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায় ব্র্যাক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ব্র্যাকের পরিবেশ নীতি প্রণয়ন করা হয়। এই নীতি ব্র্যাকের কর্মীদের জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও পরিচালনায় সক্ষম করে তুলবে।

পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৯ সাল থেকে ব্র্যাকের সকল কার্যালয় ও অনুষ্ঠানে একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে।

ব্র্যাকের সকল কর্মকাণ্ডে কৌশলগতভাবে কার্বন নিঃসরণ ধাপে ধাপে ভারসাম্য পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়সহ ব্র্যাকের সকল কার্যালয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী এলইডি লাইট প্রতিস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই সকল কার্যালয়ে শতভাগ এলইডি লাইট ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি দেশব্যপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। কাজ করছে বন ও বাস্তুসংস্থান রক্ষায়ও।

দারিদ্র্য প্রকৃতির ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ায়, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রকৃতিতে। ব্র্যাক তার সূচনালগ্ন থেকেই দাবিদ্র্য বিমোচনে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে আসছে। দিনশেষে যা বাস্তুসংস্থান রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছে।

দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (SDG) ১৭টি লক্ষ্য অর্জনেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার। সুতরাং আশা করি, বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে সরকার, উন্নয়ন সংস্থা, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় জনগোষ্ঠী সবাই যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে আরও বেশি তৎপর হবেন। বিশেষ করে তরুণ সমাজ, যাদের সাহসী ভূমিকা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

 

This blog published on Brac Blog: 3 June, 2021